প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মানব পাচারের অভিযোগ
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি 4TV
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায় ৫নং জায়ফরনগন ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামে দুবাই প্রবাসী কামাল মিয়া ও তার পরিবারকে মানব পাচারের মামলায় জড়িত করায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার শতক গ্রামের লাল মিয়ার মেয়ে শিফা বেগমকে পুঁজি করে একটি স্বার্থন্বেষী মহল নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে শতক গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী রেবা বেগম মানব পাচারের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৬২/২০১৭। মামলার অভিযোগে জানাযায়, মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে কামাল মিয়ার সাথে রেবা বেগমের মেয়ে শিফা বেগমের প্রেম সর্ম্পক গড়ে উঠে। পরে তাকে অপহরণ করে বিদেশে পাচার করে। এসময় বিদেশে থাকা কামাল মিয়ার ভাই, পিতা- মাতা ও কিছু আত্মীয়- স্বজন এ ব্যাপারে সহযোগীতা করে। বিদেশ পাচার করার পর কামাল মিয়া শিফাকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ভালো আছি বলে বাড়িতে ফোন করতে বাধ্য করে। শিফা বেগমের রোজগারকৃত দুই লাখ টাকা ও আড়াই ভরি স্বর্ণ অংলকার সুকৌশলে নিয়ে যায় এবং শিফা বেগমকে আটক ও জিম্মি করে রাখে। ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসে কামাল মিয়া তার পিতাকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। কিছু দিনের মধ্যে কামাল মিয়া দেশ চলে আসে। নভেম্বর মাসের ২১ তারিখে লাল মিয়া ও তার স্ত্রী কামালের বাড়িতে গিয়ে তাদের মেয়ের খোঁজ করলে কামাল মিয়া তাদের কাছে আবারো দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। রেবা বেগম ৭জনকে আসামি করে হবিগঞ্জ মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নিকট তদন্তের জন্য পাঠান। (পিবিআই) পুলিশ পরিদর্শক (নি:) মো: হেলালুল ইসলাম বিপি-৬৪৮৯০১০২৫২ ঘটনাটি সত্য বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে উভয় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। উক্ত মানব পাচার মামলার ঘটনা নিয়ে সরেজমিনে সাংবাদিকদের একটি টিম তদন্ত করতে গিয়ে মামলার বাদী শিফা বেগমের মা রেবা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার মেয়ে ২০১৪ সালে ঢাকার এ্যারোলিনা ট্রেভেলসের মাধ্যমে দুবাই যায়। দুবাই গিয়ে আত্মীয়তার সূত্রে কামালের সাথে পরিচয় হয়। আমার মেয়ে আমাকে জানিয়েছে কামালের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের কোনো কাগজ পত্র তার মেয়ের কাছে আছে কি না জানতে চাইলে, তিনি বলেন না এমন কোনো ডকুমেন্ট আমার মেয়ের কাছে নাই। যদি আপনার মেয়ের সাথে কামালের বিয়ে হয় তাহলে আপনি কেনো তার নামে পাচার মামলা করলেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি কিছু সময় চুপ থেকে বলেন, আর কিছু জানি না, পুলিশ আমাকে বলেছে কোর্টে পাচার মামলা করতে। পাচার হয় পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া, আপনার মেয়ে কি পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে বিদেশ গিয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ ঢাকার এ্যারোলিনা ট্রেভেলসের মাধ্যমে গিয়েছে। শিফা বাড়িতে টাকা পয়সা পাঠায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সে এক বছর টাকা দিয়েছিল। এরপর থেকে আমার মেয়ের দুই বছরের টাকা কামাল নিয়ে যায়। আপনার মেয়ের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপ হয় কি না জানতে চাইলে, তিনি বলেন ফোনে কথা হয়। এই মামলার স্বাক্ষী শিফা বেগমের খালাতো ভাই মো: হাবিবুর রহমান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঢাকার এ্যারোলিনা ট্রেভেলসের মাধ্যমে দুবাই যায়। সেখান থেকে কামালের সাথে পরিচয় হয়ে প্রেম সর্ম্পক গড়ে উঠে পরে তারা বিয়ে করে। প্রথমে এক বছর শিফা বাড়িতে টাকা দিয়েছে। পাচার প্রসংঙ্গে তিনি বলেন, সঠিক ভিসায় বাসা বাড়ির কাজে ঢাকার ফকিরাপুর এ্যারোলিনা ট্রেভেলসের মাধ্যমে দুবাই যায়। পরে কামাল দেশে এসে অন্য জাগায় বিয়ে করে আবার বিদেশ চলে যায়। ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার নূরু মিয়াকে শিফা বেগমের পাচারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, শিফা পাচার হয়নি সে বৈধ ভাবে দুবাই গিয়েছে। সেখানে কাজ করে বাড়িতে টাকা পয়সা পাঠাচ্ছে। তার বাবার আগে কোনো কিছুই ছিল না। সে যদি পাচার হতো তাহলে কি করে জায়গা জমি ক্রয় করে বাড়ি ঘর তৈরি করলো, এটা মিথ্যা অভিযোগ। আর শিফা বেগমের মা মানষিক ভাবে অসুস্থ। উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমদাদুর রহমান মকুল এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিবাদী পক্ষের লোকজন আমার সাথে বিগত দুই মাস পূর্বে যোগাযোগ করলে আমি শিফার বাবার সাথে উক্ত বিষয় জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, শিফার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানাবে। পরে আমার সাথে আর যোগাযোগ করেনি। এখানে পাচারের ঘটনা ঘটেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কিছু লোকের নিকট শিফা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তারা বলেন, শিফা ও তার বোন স্বেচ্ছায় বিদেশ গিয়েছে। এখন পাচারের ঘটনা কেনো আসলো আমরা বুঝতে পারলাম না। যদি শিফা পাচার হয় তাহলে জায়গা জমি ও বাড়ি ঘর কি ভাবে লাল মিয়া করলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। নবীগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত মো: হাবিবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, শতক গ্রামে আমার জানামতে কোন পাচারের ঘটনা ঘটেনি। এ ব্যাপারে আমি কোনকিছু জানিনা। জুড়ী উপজেলার ৫নং জায়ফরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী মাসুম রেজা বলেন, ইয়াছিন মিয়া ও তার ছেলেরা এলাকার নিরিহ শান্তি প্রিয় মানুষ। মানব পাচারের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়না। ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার সিরাজুল ইসলাম বিষয়টিকে সাজানো ঘটনা বলে মন্তব্য করে বলেন, এলাকার মাদক ব্যবসায়ী সোনাচুরা শামছু নামে পরিচিত। সে এ সমস্ত মিথ্যা মামলা মানুষ দিয়ে করিয়ে ফায়দা লুটে। মামলাটি আপোষ করে দেয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা ইয়াছিন মিয়ার নিকট দাবী করেছে। বিষয়টি তারই সাজানো।