শরীয়তপুরে বর্ষার শুরুতেই পদ্মায় ভাঙ্গন শুরু, হুমকিতে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ।
রুপক চক্রবর্তী শরীয়তপুর প্রতিনিধি 4TV
বর্ষার শুরুতেই শরীয়তপুরের নড়িয়ার উপজেলা এরিয়ার পদ্মা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২শ’ মিটার ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ স্কুল-কলেজ এবং মসজিদ-মাদরাসা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানায়, গত শনিবার রাতে পদ্মা নদীর ডান তীরে নড়িয়ার বাঁশতলা এলাকায় হঠাৎ করে প্রায় ৫০ মিটার ভেঙে যায় এবং গত কয়েকদিনে বিলাসপুর, পাচুখারকান্দি, ইশ্বরকাটি, বাশতলা, মুলফৎগঞ্জ, সাধুরবাজার গ্রামে আরও প্রায় কয়েকশ মিটার ভেঙে নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এতে পদ্মাপাড়ের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
স্থানীয় সমাজসেবক আঃ গণি ছৈয়াল জানান, নড়িয়া-জাজিরা উপজেলা বহু বছর ধরে পদ্মা নদীর ভাঙনের ফলে দুটি উপজেলা শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। গত দুই বছরে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ গৃহহারা হয়েছে। এবছর যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে আমাদের বাচার কোন আশা নেই। হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। সরকারের কাছে আমার ভাঙন ঠেকানোর জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত গত দুই বছরে পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার প্রায় ৭ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ৮ হাজার বসত বাড়ি, ১৮৫ কিলোমিটার সড়ক, ১ কিলোমিটার সুরেশ্বর রক্ষা বাধ, ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫৫ মসজিদ মাদরাসা সহ প্রায় ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার সম্পদ। এ ক্ষতি এড়াতে জাজিরা-নড়িয়া পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প ২ জানুয়ারি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় ৯ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ ও চর ড্রেজিং করা হবে। বর্তমানের প্রকল্পটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। এতে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। গত দুইবছরের মত অব্যাহতভাবে ভাঙলে এ বছর নড়িয়া উপজেলা সদর বিলিন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধের দাবী স্থানীয়দের।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক হাসান বলেন, ভাঙন শুরুর বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ঝুকিপুর্ণ জায়গা গুলোতে অস্থায়ী ভাবে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালানো হবে। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্পটি বর্তমানের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। অল্প সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। যদিও বর্ষা মৌসুমে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং। আমরা কাজ চলমান রেখে নদী ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করবো।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমীন বলেন, ইদানিং নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সরেজমিন দেখে পদ্মাপাড়ের লোকজনদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। তাদের তালিকা করা হচ্ছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্থদেরকে সকল প্রকার সরকারী সহায়তা দেয়া যায়। প্রতিবছরই এ এলাকায় পদ্মার ভাঙনে লোকজন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ইতোমধ্যে পদ্মার ডানতীর রক্ষার জন্য একনেক বৈঠকে ১হাজার ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করছি বেড়িবাধ নির্মান কাজ খুব শীঘ্রই শুরু করবে। বেড়িবাধ নির্মান হলে এ এলাকার মানুষ ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।