লোহাগড়ার কালনা সেতুর সতু নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর
এস এম আলমগীর কবির নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঢাকা-বেনাপোল মহাসড়কের নড়াইল জেলার লোহাগড়ার মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে অবশেষে সেতুর নির্মাণ শুরু হতে যাচ্ছে। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপণের সাড়ে ৩ বছর পর কার্যাদেশসহ ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। মেসার্স আবদুল মোনেম লিঃ ও জাইকার অনুমোদিত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান টেককেন কর্পোরেশন ওয়াইবিসি লিঃ যৌথ ভাবে গত ২৪ জুন সেতু নির্মাণ কাজের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে, লোহাগড়াবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। সেই সাথে খুলে যাবে সম্ভাবণার দ্বার।
এই সেতু চালু হলে মধুমতি নদীর উভয় পাড়ের অন্তত ১১ জেলার মানুষের দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। সেতুর নির্মাণ কাজ তদারকি করবেন জাইকা অনুমোদিত আরেকটি কনসাল্টটেন্ট কোম্পানী ‘দি ওরিয়েন্টাল কনসাল্টেন্ট গেøাবাল লিঃ’ (ওসিজি)। চুক্তি স্বাক্ষরে তারিখ থেকে ৩ বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্ট-লিংক কালনা’ প্রকল্পের আওতায় এশিয়ান হাইওয়ে-১ নামে পরিচিত এই সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ হবে ২৭ দশমিক ১ মিটার। ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং কম গতির যানবাহনের জন্য দুইপাশে দুই লেনসহ ৬ লেনের এই সেতু নির্মানের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫৯ কোটি টাকা।
সূত্রে আরও জানা গেছে, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নড়াইল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার প্রবেশ পথ বলে পরিচিত কালনা সেতুর গুরত্ব বিবেচনা করে গত ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কালনা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এর আগে গত ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সেতুটির ডিপিপি চুড়ান্ত ভাবে অনুমোদিত হয়। প্রকল্প অনুমোদন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করার পরও নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন কাজ আটকে ছিল।
কালনা সেতু নির্মাণে বিলম্বের কারন হিসাবে জানা গেছে-প্রকল্প গ্রহণের সময় এ সেতুর সাথে রেললাইন সংযোজনের কোন পরিকল্পনা ছিল না। পরে একই সেতুর ওপর দিয়ে রেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সে কারনে গত ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালনা সেতু এলাকা পরিদর্শনে এসে জানান, ‘কালনা সেতুর সাথে রেললাইন সংযোজনের চিন্তা করা হচ্ছে’। কিন্তু পরবর্তীতে পৃথক রেললাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। তা ছাড়া, প্রকল্প অনুমোদনের সময় এটি ৪ লেন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল এবং সে অনুসারে সেতু নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দেবার কথা ছিল জাপানী উন্নয়ন সংস্থা জাইকার। কিন্তু ৪ লেন সেতুর পরিবর্তে ৬ লেন সেতু নির্মাণের বাড়তি অর্থ দিতে জাইকা বিলম্ব করায় মুলতঃ সেতু নির্মান কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণের পর বাংলাদেশের দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের জেলা গুলির সাথে রাজধানীর দুরত্ব কোন কোন ক্ষেত্রে অর্ধেকে নেমে আসবে। সর্বোপরি দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে ঢাকার দুরত্ব প্রায় অর্ধেক হবে। এক্ষেত্রে বেনাপোল থেকে কালনা সেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে প্রায় ২০১ কিলোমিটার, যশোর থেকে ঢাকা ১৬১ কিলোমিটার এবং খুলনা থেকে বসুন্দিয়া ধলগা কালনা সেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার। অথচ দৌলতদিয়াÑপাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে এসব এলাকা থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩০০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার। তাছাড়া কালনা সেতু নির্মিত হলে শুধু যশোর বেনাপোল অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগই সহজতর হবে তা নয়। এ সেতু ব্যবহারের ফলে গোপালগঞ্জ, বরিশাল, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরিয়তপুর অঞ্চলের জেলাগুলির বেনাপোল বন্দর ব্যবহার সহজতর হবে। এশিয়ান হাইওয়ে-১ নামে পরিচিত এই সেতু নির্মাণের ফলে কলিকাতা থেকে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-লোহাগড়া-কালনাসেতু-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা-পদ্মাসেতু-মাওয়া-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের মাধ্যমে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপিত হবে। সে কারনে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি স্বল্প সময়ে রাজধানীর সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কালনাসেতু দ্রæত নির্মাণ কাজ সমাপ্তির। এ সেতু নির্মিত হলে যাত্রীদের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে উৎপাদিত পন্য সামগ্রী স্বল্প সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা সহজ হবে।
জানতে চাইলে ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক কে এম আতিকুল হক গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন ও ব্যতিক্রমী হবে এ সেতু। ছত্রিশ মাসের মধ্যে নিয়োজিত ঠিকাদারকে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে।