গাজীপুরে ভয়াবহ নেতৃত্ব সংকটে বিএনপি : গাজীপুর -৩ অাসনে নেই কোন বিএনপি'র দৃশ্যমান প্রার্থি
সদরুল অাইন :
হান্নান-মান্নান-হাসানের পর ভয়াবহ নেতৃত্ব সংকটে বিএনপি। গাজীপুর -৩ অাসনে নেই কোন বিএনপি'র দৃশ্যমান প্রার্থি। ফলে চরম নেতৃত্ব সংকটের শিকার হচ্ছে গাজীপুর বিএনপি।
একবার কোন কমিটি হলে বছরের পর বছর চলে যায়, আর নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয় না। ঘুরে ফিরে পুরনোরাই থাকেন কমিটিতে। তদুপরি একই নেতা ইউনিয়ন ও উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত একাধিক পদ দখল করে থাকেন।
তবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কারণে ঝিমিয়ে পড়া গাজীপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোতে এবার নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসছে।
ইতিমধ্যে জেলা ও মহানগর যুবদলের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে জেলা ও মহানগর মহিলা দলের কমিটি গঠন করা হয়। অচিরেই মূল সংগঠন বিএনপি ছাড়াও ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন করা হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
আর মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনা করেছে বিএনপি। যা নির্বাচনেও প্রভাব পড়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
বিশেষ করে মহানগরভিত্তিক কোনো কমিটি না থাকায় কোনো নেতাকর্মীই সক্রিয়ভাবে নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে সাহসিকতার ভূমিকা নেয়নি এবং বিভিন্ন মামলা থাকায় তারা পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়েই নির্বাচনী মাঠে কাজ করেছেন।
বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের বিদ্যমান (সরাফত-হান্নু) কমিটি কয়েক প্রজন্ম অতিক্রম করেছে। ফলে দলটি বিগত প্রায় দুই দশক ধরে জেলায় ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বর্তমানে জেলা ও মহানগরীতে ছাত্রদলের কমিটি করার জন্য অবিবাহিত ও ছাত্রত্ব আছে এমন নেতা পাচ্ছে না দলটি। একইভাবে প্রায় ১৬ বছর ধরে জেলা যুবদলের বিদ্যমান কমিটি নতুন কোনো নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেনি।
অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর বিদ্যমান কমিটির অধিকাংশ সদস্যের মনে নেই তাদের কমিটি বিগত কত সালে গঠন করা হয়েছিল। জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটিও প্রায় ৮ বছর অতিক্রম করেছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত মহানগর কমিটিই গঠন করতে পারেনি।
সবেমাত্র তারা মহিলা দল ও যুবদলের আংশিক কমিটি দিতে পেরেছে মহানগরে। বিপরিত দিকে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলো জেলা ও মহানগরীতে নিয়মিত কমিটি দিয়ে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা রয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. আ স ম হান্নান শাহর মৃত্যুর পর জেলা বিএনপি প্রায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।
মেয়র এমএ মান্নান ও হাসান উদ্দিন সরকার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত হয়তো যেতে পারেন। এর পর জেলা বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকট তৈরি হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় বিএনপি এখনো কাঙ্খিত নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেনি।
এদিকে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে জেলা ও মহানগর বিএনপিতে যখন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না, তখন আওয়ামী লীগ মাত্র গত এক যুগের ব্যবধানে কয়েক ডজন নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
যেখানে আগামী ৫ বছরের মধ্যেই বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকট প্রকট হচ্ছে, সেখানে আগামী ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব সংকটের সম্ভাবনা নেই।
আওয়ামী লীগের যুব ও ছাত্র সংগঠনে ইতিমধ্যে গ্রহণযোগ্য বেশ কয়েক নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে। সরাসরি ছাত্রলীগ থেকে আসা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন। তিনি যে কোনো প্রকারেই হোক এবার সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের চেয়ারটি দখল করতে সক্ষম হয়েছেন।
অপরদিকে জেলা ও মহানগর যুবলীগেও একাধিক যোগ্য নেতা তৈরি হয়েছেন। যারা সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনো পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম। অথচ সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে একমাত্র হাসান উদ্দিন সরকার ছাড়া অন্য কোনো যোগ্য ও শক্তিশালী মেয়রপ্রার্থী ছিল না বিএনপির। ফলে শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই হাসান উদ্দিন সরকারকে মেয়র নির্বাচন করতে হয়েছে।
বিপরিত দিকে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থীর ছিল ছড়াছড়ি। তাদের মধ্যে মূল দল আওয়ামী লীগেই ছিলেন চারজন ও যুবলীগে ছিলেন দু’জন মেয়র পদপ্রার্থী। অপেক্ষমাণ ছিলেন আরো কয়েকজন।
অন্যদিকে গাজীপুরের ৪ টি অাসনে বিএনপির পরিচিত দৃশ্যমান প্রার্থি থাকলেও গাজীপুর -৩ অাসন অর্থাৎ শ্রীপুর উপজেলায় নেই বিএনপির কোন প্রার্থি বা দলিয় কার্যক্রম।এই অাসনে বিএনপির ভোট ব্যাঙ্ক থাকলেও কোন কালেই ছিল না বিএনপির যোগ্য কোন নেতৃত্ব।যে কারনে গাজীপুর-৩ অাসন থেকে যেই নৌকার টিকেট পায় সেই হয়ে যায় এমপি।এ কারনেই এ অাসনটির প্রতি অা'লীগ নেতাদের দৃষ্টি ও উৎসূক্য অনেক বেশি।অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ার কারনে এই অাসনটির প্রতি অা'লীগের নেতৃত্ব পদ ও পদবির প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি।