নিয়ম-নীতি মানতে গিয়ে সময় মত মিলছে না পাসপোর্ট।
নিয়ম-নীতি মানতে গিয়ে জুতার তলা ক্ষয় করেও সময় মত মিলছে না পাসপোর্ট। যার ফলে বাধ্য হয়ে দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হতে হচ্ছে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের। বই সংকট আর ছাপা মেশিন নষ্টের অজুহাত পাসপোর্ট কর্মকর্তা কর্মচারীর। দালাল সদস্য ছাড়া পাসপোর্ট যেন সোনার হরিণ।
মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে গড়ে উঠা দালাল চক্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট না করালে সময়মত পাসপোর্ট পাওয়াটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় শতাধিক পাসপোর্টের আবেদনে জমা পড়ে। প্রতিটি পাসপোর্টে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় কয়েক অর্ধকোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য চলে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিশেষ এ দালাল চক্রের সদস্যরা পাসপোর্ট অফিসের প্রধান গেটের সামনে আশ-পাশে ঘুরা ফেরা করে। এছাড়া সরকারি হরগঙ্গা কলেজের মোড় ও খালইস্ট মোড়ে এবং চায়ের দোকানে বসে সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের কার্যক্রম। যখনই কোন ব্যাক্তি পাসপোর্ট করতে আসেন, তখনই তাকে পড়তে হয় এ চক্রের সদস্যদের কবলে। দালাল চক্রের কথা মত পাসপোর্ট না করলে পাসপোর্ট প্রত্যাশী ব্যাক্তিকে পড়তে হয় বিপাকে। নিজের পাসপোর্ট নিজেই করতে গেলে পাসপোর্ট সময় মত হাতে পাওয়াটা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আবেদনে থাকে ভুল, থাকেনা প্রয়োজনীয় কাগজ, পাসপোর্ট বইয়ের সংকট, ছাপা মেশিন নষ্ট সহ নানা ধরনের অজুহাত। অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পরিবেশটা এমন ভাবে তৈরী করে, যাতে পাসপোর্ট প্রত্যাশী বাধ্য হয়ে দালাল সদস্যদের কাছে শরণাপন্ন হতে হয়। বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস পুরোটাই যেন দালাল চক্রে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
সিরাজদিখান থেকে আসা পাসপোর্ট প্রত্যাশী নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ফরম পূরণ করে সরকারি ফি বাবদ ব্যাংক ড্রাফটসহ পাসপোর্ট অফিসে জমা দেয়ার পর অফিসের ১০৭ নম্বর কক্ষে দায়িত্বে থাকা ডাটা এন্টি অপারেটার কাম অফিস সহকারি, মো. শহিদুর ইসলাম ফরমে একাধিক ভুল হয়েছে অযুহাত দেখিয়ে ফেরত দেয়। পুনরায় আবেদন পত্র পূরণ করে ওই অফিসে গেলে একই অযুহাতে ফেরত পাঠানো হয়। পরে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা দিয়ে দালালদের মাধ্যমে ঐ একই আবেদন পত্র জমা দিলে পিঙ্গার পিন্ট নেয় অফিস কর্তৃপক্ষ।
একাধিক পাসপোর্ট প্রত্যাশী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, দালালের মাধ্যমে বাড়তি ২/৩ হাজার টাকা দিলে রোহিঙ্গাদের যাচাই বাছাই ছাড়া পাসপোর্ট পেতে সমস্যা হয় না। কিন্তু সরাসরি পাসপোর্ট আবেদন পত্র জমা দিতে গেলে এটা ভুল, ওটা ভুল বলে হয়রানি শুরু হয়।
এ প্রতিবেদকের সাথে কয়েক মাস ধরে কথা হয় অনেক দালাল সদস্যদের সাথে। নাম প্রকাশ না করা সত্বে কয়েকজন দালাল সদস্য বলেছেন, পাসপোর্ট অফিসে আমাদের বদনামটাই বেশি। অথচ প্রতি পাসপোর্টে আমারা পাই মাত্র ৭-৮শ’ টাকা। অতিরিক্ত সব টাকা যায় রাঘববোয়ালদের পেটে। রাঘববোয়ালদের কথা জানতে চাইলে দালাল সদস্য এই প্রতিবেদককে বলেছেন, প্রতিটি পাসপোর্টে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে ফাইল প্রতি পাসপোর্ট অফিস নেয় ১ হাজার ১শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করতে নেয় ৬শ’ টাকা।
দালালদের ভাষ্য ও গ্রাহকদের অভিযোগের হিসাবে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে শতাধিক পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়ে। প্রতিটি আবেদনে ৩ হাজার টাকা করে প্রতিদিন ৩ লক্ষাধিক টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয় এই পাসপোর্ট কে কেন্দ্র করে।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক হালিমা খাতুন অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বলেছেন, আপনি আমার অফিসে আসেন। তার পরে বুঝতে পারবেন কোনটা সঠিক।