যশোর বেনাপোল মহাসড়ক এখন মৃতফাঁদে পরিণত
মীর ফারুক শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোর থেকে বেনাপোল বেনাপোল পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার মহাসড়কটি এখন মানুষের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হচ্ছে অনেকে। এই মহাসড়কের কারণে অনেক পরিবার প্রতিনিয়ত অভিভাবকহীন হচ্ছে। এবং দূর্ঘটনায় অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে দূর্বিষহ জীবন যাপন করছে। গত কয়েক মাসে বেনাপোল যশোর মহাসড়ক যশোর চাঁচড়া থেকে নাভারণ বাজার ২৬ কিলোমিটার পুরো রাস্তাটি পিচ উঠে ছোট বড় খানা খন্দের কারণে মৃতফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক দিনে এই সড়কে দূর্ঘটনা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত আগষ্ট মাসে ১৪ তারিখ বেনেয়ালী বাজারে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা মারলে শিমুলিয়া গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে রাজুসহ দুজন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়। ১৮ আগষ্ট নাভারণ সেবা ক্লিনিকের সামনে সোহাগ পরিবহনের সাথে দুর্ঘটনায় শার্শা লক্ষণপুর ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের ভঙ্গকেশের ছেলে স্বপন কুমার (৫৫) নিহত হয়। ২৮ আগষ্ট নাভারণ আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরীর সামনে সড়ক দূর্ঘটনায় ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ থানার মতিগঞ্জ গ্রামের নিতাই ঘোষের ছেলে স্বপন ঘোষ (৪৫) নিহত হয় ও তার স্ত্রী অঞ্জনা ঘোষ (৪০), শ্যালিকা কাজল ঘোষসহ ৬ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে কোলকাতা এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শ্যালিকা কাজল ঘোষ মারা যায় বলে যায়। ১৬ সেপ্টেম্বর উলাশী হাড়িখালী মোড় ইজি বাইক ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে লাউতাড়া গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে জনি নিহত ও ৩ জন আহত হয়। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর নাভারণ বাজারে গরুহাট সংলগ্ন সোহাগ পরিবহনের সাথে দূর্ঘটনায় লক্ষণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের ই¯্রাফিল চৌকিদারের ছেলে আব্দুল হামিদ (৪০) গুরুতর আহত হয়। এখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন আছে। তার অবস্থা এখনো আশংখাজনক বলে জানা যায়।
নাভারণ হাইওয়ে পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছরে যশোর বেনাপোল মহাসড়কে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে ৪২ জন, আহত হয়েছে শতাধিক এবং যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ বিষয়ে নাভারণ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি আই সি আফজাল হোসেন বলেন, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ৬০% লাইসেন্স বিহিন অদক্ষ ড্রাইভারের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মামলার অভিযোগ পত্র দাখিল করলেও আজ পর্যন্ত কোন মামলার রায় ঘোষণা হয়নি। সকল মামলা বিচারাধীন আছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর যশোর বেনাপোল অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন শত শত ট্রাক আমদানী রপ্তানী কাজে বেনাপোল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য নিয়ে যায়। এবং বেনাপোল দিয়ে ভারতের সাথে যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু মানুষ বেনাপোল দিয়ে ভারতে যায়। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে যে পরিমাণ যানবাহন বৃদ্ধি পেয়েছে সে অনুযায়ী যশোর বেনাপোল সড়কটি প্রশস্ত হয়নি। যথাযথ রাস্তা সংস্কারের অভাব যানবাহন বৃদ্ধি সংকীর্ণ সড়ক দূর্ঘটনার মূল কারণ বলে তারা মনে করেন।
বিশেষ সুত্রে জানা যায়, যশোর বেনাপোল মহাসড়কটি ফোর লেনে উন্নতি করার কথা থাকলেও বনবিভাগ ও সড়ক বিভাগের সড়কের দুই পাশে শতবর্ষি গাছের মালিকানা নিয়ে টানাটানিতে যশোর বেনাপোল ফোর লেনের কাজ আপাতত স্থগিত আছে বলে জানা যায়।
হঠাৎ যশোর বেনাপোল মহাসড়কে সড়ক দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিজামপুরের ওয়াদুদ হোসেন, কলাগাছি গ্রামের আব্দুস সামাদ বলেন, বর্তমান মহাসড়কে যে পরিমাণ দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে আমরা আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজ থেকে বাড়ী ফেরা না পর্যন্ত চিন্তার ভিতরে থাকি।