মহেশপুরে পুড়াপাড়া বাজারে বড়-বড় গর্তে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার জনসাধারন
মোঃ নজরুল ইসলাম কোটচাঁদপুর উপজেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ 4TV
যশোরের চৌগাছা এবং ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী স্থানে পুড়াপাড়া বাজারটি অবস্থিত। এই বাজার থেকে সরকার প্রতিবছর লাখ-লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করছে । অথচ এই বাজারটির অবস্থা নাজুক । প্রায় ৮০০'র অধিক ব্যবসায়ী এই বাজারটিতে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা করেন।
পুড়াপাড়া বাজার সহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে প্রায় ৫৯টি ধানের চাতাল/মিল। এছাড়া ২দুটি বড় অটো রাইচ মিল।
চৌগাছা উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার এবং মহেশপুর উপজেলা থেকে ১১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত বাজারটিতে প্রতিদিন দুই উপজেলার ২০/৪০ হাজার জনসাধারণ চলাচল করেন।
পুড়াপাড়া বাজারটির কেন্দ্র করে এবং পাশ ঘেষেই রয়েছে এলাকার ঐতিহ্যবাহী কাটগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাটগড়া সরকারি কুঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাঃ সাইফুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ কাটগড়া, শ্যামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামনগর-বিশ্বনাথপুর কওমি মাদ্রাসা, কাটগড়া কিন্ডারগার্টেন, দি সান রাইজ এডাস স্কুল, মান্দারবাড়ীয়া দাখিল মাদ্রাসা, কমলাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার-হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করে ।
বাজারটির মধ্যে রয়েছে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা ও বাওড় মৎস প্রকল্পের কাটগড়া বাওড়ের অফিস, দুটি প্রাইভেট ক্লিনিকসহ বিভিন্ন এনজিও ও বেসরকারি সংস্থার স্থানীয় অফিস।
এছাড়া ভারতীয় সীমান্তের ৪টি বিজিবি ক্যাম্প (আন্দুলিয়া, আড়সিংড়িপুকুরিয়া, রামকৃষ্ণপুর এবং পাচপীরতলা)!
বিজিবি ক্যাম্পগুলিতেও যাতায়াতের একমাত্র সড়কপথ এই বাজারটির উপর দিয়ে। চৌগাছার সুখপুকুরিয়া, নারায়ণপুর ও স্বরূপদাহ ইউনিয়ন এবং মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক জনসাধারণ এই হাটটিতে কেনা-বেচা করে থাকেন।
সূত্র জানায় দু’ উপজেলার সীমান্তের হাটটি থেকে ইজারা বাবদ বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও হাটটি উন্নয়নে কোন অবদান রাখছেনা কর্তৃপক্ষ। সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারটির মেইন বাসস্ট্যান্ড, সোনালী ব্যাংক মোড়, হাইস্কুল মোড়, পুরাতন গরুহাট, কলেজ মোড়সহ কাঁচাবাজারের মধ্যে পানি-কাঁদায় একাকার হয়ে যায়। বাজারটিতে নেই কোন পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা। ফলে প্রতিদিন বাজারে চলাচলকারী ক্রেতা-বিক্রেতা, স্কুল-কলেজ-মাদরাসাগামী ছাত্র-ছাত্রী, মসিজদে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লী, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারন মানুষকে পড়তে হচ্ছে নানামুখি সমস্যায়। একদিকে কাঁদা লেগে প্রতিদিন নষ্ঠ হচ্ছে তাদের পোষাক, অন্যদিকে হঠাৎ কাঁদা মেখে তারা হচ্ছেন বিব্রত।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান বাজারটির দক্ষিণ দিকের সামান্য অংশ অর্থাৎ মেইন বাসস্ট্যান্ড থেকে সোনালী ব্যাংক সড়কটিই শুধুমাত্র চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। এছাড়া বৃহৎ অংশ মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের মধ্যে। বাজারটি ইজারা দিয়ে থাকে মহেশপুর উপজেলা পরিষদ। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরেও সাধারণ এবং পশু হাট মিলে প্রায় দেড় কোটি টাকার ডাক হয়। তবুও হাটের কোন উন্নয়ন হয়নি। তবে পার্শ্ববর্তী চৌগাছা উপজেলার পশুহাটটি বৃহৎ আকারে শুরু হওয়ায় চলতি বাংলা সনে শুধুমাত্র সাধারণ হাট কিনেছেন ইজারাদাররা। সেখান থেকেও সরকার প্রায় ৭ লক্ষ টাকা রাজস্ব পেয়েছে। অথচ উন্নয়নের কিছুই হচ্ছেনা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাটটি মহেশপুর উপজেলা পরিষদ ইজারা দিলেও সে অংশে উন্নয়ন হয় খুবই কম। চৌগাছার অংশে কিছু উন্নয়ন কাজ হয়। এই অংশে সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোতা মিয়ার সুদৃষ্টিতে কিছুটা উন্নয়ন হয়ে থাকে। তারা বলেন চেয়ারম্যান তোতা মিয়ার কাছে দাবি জানালে তিনি সে দাবি রক্ষার চেষ্টা করেন। অবশ্য বাজারটির অধিকাংশ ব্যবসায়ী’ই চৌগাছা উপজেলার হওয়ায় তারাও মহেশপুর গিয়ে তেমন একটা দাবি জানান না।
পুড়াপাড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ রুজীন আলী বলেন, 'হাটের সড়ক এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন না হওয়ায় পানি-কাঁদায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের পাশাপাশি স্কুল কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সীমাহীন বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ব্যাপক কাঁদা হওয়ায় প্রতিদিন স্কুল-কলেজগামী ছেলে-মেয়েরা সাইকেল নিয়ে বা এমনিতেই কাঁদা-পানিতে পড়ে তাদের পোষাক নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে।'
মহেশপুরের ১১নং মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিদুল ইসলাম বলেন 'অর্থ বছরের শেষ মাস হওয়ায় এখনি হাটের উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। হাটটি এবছরও ছয় লক্ষ টাকার উপরে ডাক হয়েছে। উপজেলা পরিষদ এটি ইজারা দিয়ে থাকে।
সেখান থেকে ১৫ শতাংশ টাকা পাওয়া যাবে । জুন ও জুলাই মাসে টাকা পাওয়া গেলেই হাটের উন্নয়ন কাজ করা হবে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক সহ সংশিলিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে অত্র এলাকার সর্ব স্তরের জনসাধারন ।