গণমাধ্যমে চাঁদপুরের গ্রাম আদালত
বিশেষ প্রতিনিধি:
চাঁদপুরে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। জেলার ৫টি উপজেলায় মোট ৪৪ ইউনিয়নে এ প্রকল্পটি কাজ করছে। দুটি বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটি কাজ করে যাচ্ছে: ১- গ্রাম আদালত সম্পর্কে এলাকায় জনসচেতনতা সৃষ্টি করা যাতে এলাকাবাসী গ্রাম আদালতে এসে বিচার চাইতে পারেন; ২- ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাতে তারা গ্রাম আদালত আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে বিচারিক-সেবা নিশ্চিত করতে পারেন। এক কথায়; সেবা গ্রহণকারীদের সচেতন করা এবং সেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করাই এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
এ দুটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির আওতায় ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্যবৃন্দ, সচিব, আদালত সহকারী ও গ্রাম পুলিশদের বিশেষ দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। অন্যদিকে নিয়মিত উঠান-সভা, ভিডিও প্রদর্শন, জনসচেতনতামূলক র্যালী, কমিউনিটি সভা ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেটওয়ার্কিং সহ বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে গুণগত সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান বলেন, গ্রাম আদালতের এই প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে চাঁদপুর সহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ফলে চাঁদপুর সহ দেশের অগণিত মানুষ গ্রাম আদালতের বিচারিক-সেবা, আইনগত প্রক্রিয়া এবং আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাচ্ছেন এবং প্রয়োজনে গ্রাম আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যমের এই ইতিবাচক প্রচারণা গ্রাম আদালতের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এ যুগের মানুষেরা এখন অনেকটা গণমাধ্যম-নির্ভর। সত্য-সুন্দর তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে গণমাধ্যমগুলো সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ রয়ে আনছে। এজন্য আমি সকল গণমাধ্যমকে এবং এর সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
স্থানীয় সরকার উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, গণমাধ্যম হল সমাজের দর্পণ। তথ্য প্রবাহের পাশাপাশি শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এর সহযোগিতায় নিমিষেই লক্ষ-কোটি জনতার কাছে অতি সহজে বার্তা পৌছানো সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের শক্তি অপরিমেয়। চাঁদপুরের গ্রাম আদালতকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ, ফিচার ও তথ্য প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এজন্য তাদের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ। আশা করি এ ধারা জনস্বার্থে অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে গ্রাম আদালতের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর (ডিএফ) নিকোলাস বিশ্বাস বলেন, চলতি বছর জানুয়ারি-২০১৯ হতে আজ অবধি চাঁদপুরের গ্রাম আদালতকে কেন্দ্র করে মোট ১২০৮ টি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে ১৭২ টি সংবাদ ও ফিচার বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে ৪০ ভাগ প্রকাশিত হয়েছে চাঁদপুর মিডিয়িা থেকে এবং বাকী ৬০ ভাগ প্রকাশিত হয়েছে সারা দেশের মিডিয়া থেকে। হয়তো এ সংখ্যা আরো বাড়তো; কারণ প্রকাশিত সকল নিউজ আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি। এ সংখ্যা ২০১৮ সালে ছিল ৬০০ এবং ২০১৭ সালে ছিল ৩২০। ডিএফ সাহেব আরো বলেন, গ্রাম আদালতের সাথে গণমাধ্যমগুলোর সম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রসঙ্গতঃ বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং ইউএনডিপি -এর সহায়তায় ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ “বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প” চাঁদপুর সহ দেশের মোট ২৭ জেলায় বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের মূল ভিত্তি হল: গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (সংশোধন ২০১৩) এবং গ্রাম আদালত বিধিমালা ২০১৬।।