আগুনের কুণ্ডলীর পাশে রাত কাটান রংপুরের দরিদ্ররা
একটু উত্তাপের আশায় আগুনের কুণ্ডলিতে নিজেদের মেলে ধরে বসে থাকেন বয়োজ্যেষ্ঠরা। কোলের গরমে ওম খুঁজে পায় শিশুরা। এমন সময় একরাশ হিম বাতাস নিয়ে ছুটে আসা ট্রেনের ঝাঁপটায় নিভে যেতে চায় খড়কুটোর আগুনের কুণ্ডলী। বিপজ্জনক জেনেও প্রতি রাতে রেললাইনের ধারে দলে দলে বসে থাকে আলমনগর বস্তির মানুষ।
উত্তরের নগর রংপুর হিমালয়ের কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় তীব্র শীতপ্রবণ এই অঞ্চল। প্রতি বছরের মতো এবারও ভাসমান-ছিন্নমূল জীবনে শীত বর্ণনাতীত কষ্টের উপলক্ষ।
১৮৬৯ সালে গোড়াপত্তন এই শহরের। প্রায় ১৫০ বছর ধরে পৌরসভাটি ক শ্রেণি উন্নত হয়েছে। তা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়েছে ২০১২ সালের ২৮ জুন । কিন্তু উন্নতি হয়নি জীবনমানের। বরং সংখ্যা ও পরিধি বেড়েছে বস্তিগুলো। নগরীর ৫৭টি বস্তিতে এখন প্রায় লাখো মানুষের বাস।
শীতে আক্রান্ত হয় মধ্যবিত্ত নামের আড়ালে নির্দিষ্ট আর স্বল্প আয়ের মানুষও। অসহ্য শীত থেকে বাঁচতে অনেকেই ভিড় করে নগরীর পুরাতন কাপড়ের ভাসমান মার্কেটগুলোতে। দরদাম করে এখানে পোশাক কেনেন তারা। এখানকার ক্রেতাদের অনেকের অভিযোগ দাম নিয়ে।
রাতের বেলা রিকশা চালন কোহিনুর হুসেন। বলেন, আইতোৎ ইসকা চালাং, খুবেই জার নাগে। তবোন পড়ি ঠান্ডায় পাও জমি যায়, হাত- শিক নাগি যায়। একান টাউজার নিবার আসসোনোং। তা যে দাম কয়ছে। তায় ফিরি যায়ছোল।
তবে কষ্ট যেমনই হোক, বাঙালি ঐতিহ্যের পিঠাপুলির ছোট ছোট দোকানগুলোতে ভিড় করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। গরম পিঠার ধোঁয়ায় কেউ কেউ খুঁজে পায় মৌসুমি জীবীকার পথ।
ভাড়া মেসে থাকা কয়েকজন ছাত্রছাত্রী জানালেন, গ্রামে যাওয়া হয় না বলে শহরের ফুটপাথের দোকানে এসে ভাপা-চিতই খান তারা।
বাজারে চালের আড়তের শ্রমিক সাদেরুল, মোহিব্বুল, কাওছার শীতের সময় রাতে ভাতের বদলে দুটো ভাপা বা শুঁটকি ভর্তা দিয়ে গরম চিতই খেয়ে নেন।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর ভাসমান ছিন্নমূল, প্রতিবন্ধী ও বস্তি এলাকায় ৫১ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ আছে আরও ৬ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, দরকার হলে আরও কম্বল ও টাকা দেয়ার কথা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ হিসাবে নগির ৩৩টি ওয়ার্ডে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৫৫৬ জনের বাস। আর পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ জরিপে এই জেলায় দারিদ্রের হার ৪৪ শতাংশ।