জমি নিজের নামে লিখে না দেওয়ায় ঘুমন্ত মাকে হত্যাকারী ছেলে কারাগারে এখন পাগল ও দুই পা অবশ!
জমি নিজের নামে লিখে না দেওয়ায় ঘুমিয়ে থাকা মাকে (৮২) মশারির নিচেই জবাই করে হত্যা করে পাষণ্ড ছেলে আবু তালেব। প্রায় আট বছর আগে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছিল ময়মনসিংহের নান্দাইলের কানুরামপুরের কতুবপুর গ্রামে। ঘটনার দুদিন পর ধরাও পড়ে সে। এর পর থেকেই বিচারের জন্য কারাগারে আছে।
গতকাল মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) তাকে আদালতে হাজির করা হলে জানা যায়, এর মধ্যে সে মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে পাবনার মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ফের কারাগারে আনা হয়। এখন সে দুই পা অবশ অবস্থায় দিনযাপন করছে।
এ ধরনের কথার সত্যতা স্বীকার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আব্দুছ ছাত্তার (বর্তমানে ত্রিশাল থানায় কর্মরত) কালের কণ্ঠকে জানান, 'আদালতে হাজিরার পর সিঁড়ি দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে নামার সময় দেখা হলে মাকে হত্যায় অভিযুক্ত ছেলে তাঁকে (আব্দুছ ছাত্তার) দেখেই বলে, ‘স্যার ভালা আছুইন, আমার ফডোডা (ছবি) তুলুইন। পরে আমার এই দশা বেহেরে (সকল) দেহাইন যে।'
জানা যায়, ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কানুরামপুর এলাকার কুতুবপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেন ভুঁইয়ার স্ত্রী মোছাম্মৎ মঞ্জিলা বেগমের জবাই করা লাশ পাওয়া যায় বিছানায় মশারির নিচে। নিহত মঞ্জিলার ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে থাকলেও বাড়িতে অবস্থান করে বড় ছেলে আবু তালেব (৪৫)। তখন তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা ধারণা করে, মায়ের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত ঘটনায় আগে করা বিবাদের কারণে ছেলে আবু তালেবই ঘটনা ঘটাতে পারে। এ অবস্থায় দুই দিন পর পাশের এলাকা থেকে তাকে আটকের পর স্বীকার করে, সে তার মাকে হত্যা করেছে।
পাঁচ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে রাশিদা তখন জানিয়েছিলেন, জমির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তার তিন ভাইয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধসহ মামলা-মোকদ্দমা চলে আসছিল। সম্প্রতি আবু তালেবের বিরুদ্ধে একটি মামলায় মা মঞ্জিলা বেগমকে সাক্ষী রাখে আরেক ছেলে আব্দুল কাইয়ুম। এ নিয়ে বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করত আবু তালেব।
প্রতিবেশীরা জানান, দুই ছেলে ঢাকায় এবং মেয়েরা সবাই স্বামীর বাড়িতে থাকায় আবু তালেবকে নিয়ে বসবাস করতেন বৃদ্ধা মঞ্জিলা বেগম। ওই দিন সন্ধ্যায় তার হিস্যার জমি লিখে দেওয়ার জন্য মাকে চাপ দেয় আবু তালেব। রাজি না হওয়ায় বসত ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুরসহ বৃদ্ধ মাকে লাঞ্ছিত করে। পরে ভোরে বৃদ্ধা মঞ্জিলার জবাই করা রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায় চৌকির ওপর।
তখন বৃদ্ধার ভাতিজি কোহিনুর বেগম জানিয়েছিলেন, সকাল ৯টা বাজলেও তার চাচি ঘুম থেকে না উঠায় ঘরে প্রবেশ করে দেখেন মশারি টাঙানো ও ভেতরে কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় চাচি শুয়ে রয়েছেন। এ অবস্থায় কাঁথা সরিয়ে রক্ত দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। বাড়ির লোকজন ধারণা করছে, রাতের কোনো একসময় ছেলে আবু তালেব তার মাকে ঘুমের মধ্যে জবাই করে পালিয়ে যায়।