উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে বিট-খাটাল প্রদানে নীতিমালা লংঘন
নিজস্ব প্রতিবেদক Channel 4TV : রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে বিট-খাটাল অনুমোদন ও নবায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা লংঘনের অভিযোগ উঠেছে। গরুর সঙ্গে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিট-খাটাল অনুমোদন ও নবায়নের সুপারিশ করার এমন অভিযোগ উঠেছে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, এমনকি খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে।
দেশে মাংসের চাহিদা পূরণ ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সীমান্তে বিট-খাটাল নীতিমালা জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সীমান্ত ফাঁড়িসংলগ্ন স্থানে খাটাল স্থাপন ও সীমান্তপথে গবাদিপশু এনে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন গন্তব্যে চালান করার নির্দেশনা রয়েছে এ নীতিমালায়। নীতিমালা জারির পর উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ কয়েকটি জেলার সীমান্তে ৩০টির বেশি বিট-খাটাল অনুমোদন দেয়া হয়।
জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল থেকে আগে অনুমোদন পাওয়া সব বিট-খাটালের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুন বাংলা বছরের জন্য বিট-খাটাল অনুমোদন নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে চোরাচালান সিন্ডিকেট চক্র। গরুর সঙ্গে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক আসছে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে চাঁদাবাজ ও চোরাচালান সিন্ডিকেট চক্রকে বিট-খাটাল দিতে আপত্তি করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না।
সূত্রমতে, রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী সীমান্তের প্রেমতলি ও সাহেবনগর বিওপির সংলগ্ন বিট-খাটালের জন্য আবেদন করেছেন আরিফুল ইসলাম বিপ্লব ও এনামুল হক। তারা দুইজনেই মাদক প্রচার সিন্ডিকেটে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে। এই মাদক সিন্ডিকেটের দুই সদস্যকে বিট-খাটাল অনুমোদন দেয়ার জন্য সুপারিক করে ফাইল পাঠিয়ে দিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, উপজেলার রাতুপাড়া গ্রামের আরিফুল ইসলাম বিপ্লবের বিরুদ্ধে ফেনসিডিল পাচারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই গোদাগাড়ী থানায় মামলা হয়। মাদক আইনের এই মামলা এখন বিচারাধিন রয়েছে।
অপরদিকে, উপজেলার কালিদীঘি গ্রামের এনামুল হকের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় মাদক আইনের মামলা ছাড়াও একটি হত্যা মামলা রয়েছে। হেরোইন প্রচারের অভিযোগে ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এনামুলের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। যা এখন বিচারাধীন। এছাড়াও একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর গোদাগাড়ী থানায় দায়ের করা সায়রা বেগম হত্যা মামলার আসামী রয়েছে এনামুল হক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলা ১৪২৩ সালের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের অহেদপুর ফাঁড়ির খাটালের অনুমোদন দেয়া হয় ঢাকার ধানমণ্ডির বাসিন্দা জনৈক হাসনাতের নামে। অনুমোদন নিয়েই হাসনাত নীতিমালা লংঘন করে বিপুল টাকায় মালিকানা বিক্রি করে দেন সীমান্তের দালাল ও হুন্ডি সিন্ডিকেটের কাছে।
এদিকে এবারও সেই খাটালের মালিকানা পেতে হাসনাতের স্ত্রী সামসি পপি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। সামসি পপি দুর্গম সীমান্তে কীভাবে গরুর বিট পরিচালনা করবেন সেটা না দেখে জেলা প্রশাসন রহস্যজনক কারণে তার ফাইলে সুপারিশ দিয়ে বিভাগীয় কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। বিভাগীয় কমিটি গত ১৮ এপ্রিলের সভায় সামসি পপির ফাইলটিতে অনুমোদন দিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে অহেদপুর খাটালের জন্য জনৈক ওবাইদুর রহমানের নামে একইভাবে সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় জেলা ও বিভাগীয় টাস্কফোর্স।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তের একেকটি বিট-খাটাল অনুমোদনে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দিতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। আর প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বদলে এসব বিট-খাটাল দেয়া হচ্ছে চাঁদাবাজ, অস্ত্র ও মাদক পাচার সিন্ডিকেটকে জড়িতদের, যারা কখনও গরু ব্যবসা করেননি। তারা খাটাল নিয়ে গরু থেকে বিপুল পরিমাণ চাঁদা তোলা ছাড়াও সীমান্তপথে অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক আনছে। পাশাপাশি চালাচ্ছে হুন্ডি ব্যবসা। এতে বিট-খাটাল স্থাপনের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে। বিজিবির দাবি, এতে সীমান্তে নিরাপত্তার সমস্যা বাড়ছে।