মান্দায় বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তি কমিয়েছে গ্রাম আদালত
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক বিরোধ, দাম্পত্য কলহ, তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি, যৌতুক, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাগুলো সহজেই নিষ্পত্তি করছে গ্রাম আদালত। নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত চলতি বছরের দুই মাসে এ ধরনের ১৫টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে। বিচারাধীন রয়েছে আরও ২০ টি মামলা। গ্রাম আদালতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হওয়ায় ভোগান্তি কমেছে বিচার প্রার্থীদের। বুধবার সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পরিষদ চত্বরে শতাধিক নারী-পুরুষের খন্ড খন্ড জটলা। আদালতের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় তাদের এই জটলা। বেলা ১১টার দিকে চেয়ারম্যান ইলিয়াস আলী খাঁন বিচারিক কাজ শুরু করেন। এসময় গ্রামপুলিশের ডাকে বিচার প্রার্থীরা পরিষদের হলরুমে প্রবেশ করেন। শুরু হয় শুনানীর কাজ। পরানপুর ইউনিয়নের জিওইল গ্রামের মনসের আলীর মেয়ে ময়ফুল বিবি (২৫)। প্রায় ৬ বছর আগে একই ইউনিয়নের বান্দাইপুর গ্রামের মমতাজ হোসেনের ছেলে তছির উদ্দিন সঙ্গে বিয়ে হয়। জুম্মন (৫) নামে এ দম্পতির একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দের জের ধরে ময়ফুল বিবিকে তালাক দেন স্বামী তছির উদ্দিন। হতদরিদ্র ঘরের সন্তান হওয়ায় ওই সময় তিনি আইনের সহায়তা নিতে পারেন নি। দ্বারস্থ হয়েছিলেন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মানবাধিকার শাখায়। ব্র্যাকের ওই শাখা কর্তৃক দফায় দফায় নোটিশ দেওয়া হলেও হাজির হয়নি স্বামী তছির উদ্দিন। এ অবস্থায় আবারও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে স্বামী তছির উদ্দিন তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। দু’জনেই একটি গার্মেন্টে কাজ নেন। বিয়ে ছাড়াই তারা একত্রে সংসার করেন অন্তত তিন মাস।
গৃহবধূ ময়ফুল বিবি জানান, ঢাকায় অবস্থানকালে স্বামীকে ৩ দফায় ৩০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইলফোন দিয়েছেন। বাড়িতে কাজের কথা বলে মোবাইলফোন ও টাকা-পয়সা নিয়ে স্বামী তছির উদ্দিন ঢাকা থেকে চলে আসেন। এরপর আর ফিরে যায়নি। অবশেষে শিশু সন্তান জুম্মনকে নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। বিয়ে করে ঘরে তুলে নিতে স্বামীকে চাপ দেন। স্বামী টালবাহানা শুরু করায় গ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করেন। ন্যায় বিচারের আশায় গ্রাম আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার এ মামলার প্রাথমিক শুনানী হয়েছে।
ইউনিয়নের বামনগাঁ গ্রামে শিশুদের পেয়ারা খাওয়াকে কেন্দ্র করে বজলুর রশিদ ও আব্দুর রাজ্জাকের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বজলুর রশিদ চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক গংদের বিবাদি করে গ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। উভয়পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করেন গ্রাম আদালতেই তারা ন্যায় বিচার পাবেন। ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস আলী খাঁন জানান, গ্রাম আদালতে গত দুই মাসে ১৫ টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আরও ২০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত মামলা সর্বাধিক বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিছু কিছু মামলার বিচারিক কাজে জটিলতা সৃষ্টি হলে উভয়পক্ষকে আইনের আশ্রয়ে যাবার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। চেয়ারম্যান আরও বলেন, অনেক মামলার বিচারিক কাজ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অনেকে পরিষদের দেওয়া রায় উপেক্ষা করেন। আবার নোটিশ দেওয়ার পরও কেউ কেউ হাজির হন না। এতে গ্রাম আদালতের মানহানী ঘটে। স্থানীয় ছোটখাটো বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে গ্রাম আদালতকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। পরানপুর ইউনিয়ন পরিষদ সুত্র জানায়, গতবছর গ্রাম আদালতে শতাধিক মামলা নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। নিষ্পত্তিকৃত মামলাগুলো থানা কিংবা আদালত পর্যন্ত গড়ালো বাদি ও বিবাদি উভয়পক্ষই ভোগান্তির শিকার হতেন। আদালতপাড়ায় ঘোরাঘুরি করতে হত দিনের পর দিন। ব্যয় হতো প্রচুর অর্থ। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে এসব মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় ভুক্তভোগি পরিবারগুলো হয়নারীসহ আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।